এই সাপ্তাহের হাইলাইটস
গর্ভধারণ করতে আরো কিছু দিন বাকি
এইসাপ্তাহে গর্ভধারণের আগে আপনার শেষবারের মতো মাসিক হবে ৷ গর্ভে আপনার ছোট্টমণির জীবন শুরু হতে আর কিছুদিন বাকি ৷ তবে এরমধ্যেই আপনার শরীর সবধরনের প্রস্ততি শুরু করে দিচ্ছে ৷ কাগজে-কলমে আপনি এই সাপ্তাহ থেকেই গর্ভধারণের যাত্রা শুরু করছেন ৷
থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং পরিক্ষা করান
থ্যালাসেমিয়া হলে মারাত্মক রক্তশূন্যতা হতে পারে ৷ রোগটা বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তানের কাছেও যেতে পারে ৷ ফলে বংশপরম্পরায় আপনাদের ছোট্টমণি আক্রান্ত হতে পারে ৷ একটা সহজ রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমেই আপনারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না সেটা জানতে পারবেন ৷
আয়ান-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খান
শিশুর মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রতিদিন আয়ান-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার প্রয়োজন ৷ দেরি না করে এই সাপ্তাহ থেকেই আয়ান-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে দিন ৷
প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ কী কী ?
প্রেগনেন্সির সম্পর্কে নাশ্চিতকারণ শুধুমাত্র প্রেগনেন্সি টেস্টের মাধ্যমে হয় ৷ তবে কিছু লক্ষন আছে, যা থেকে ধারণা করা যায়যে আপনি প্রগনেন্সি কি না ৷ হালকা স্পটিং এবং পিরিয়ড মিস হওয়া প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ, যা সম্পর্কে প্রায় সবাই জানেন ৷ কিন্তু এর আরো অতিরিক্ত প্রাথমিক লক্ষণ আছে, যা প্রতিটি মহিলার জানা উচিত ৷এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রেগনেন্সি একটি সুন্দর অনুভুতি ৷ এই অবস্থায় কিছু প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে যা থেকে প্রেগনেন্সির ইঙ্গিত পাওয়া যায় ৷
- পিরিয়ড মিস হওয়া : পিরিয়ড মিস হওয়াকে আপনি প্রেগনেন্সির প্রথম লক্ষণ বলতে পারেন ৷ যদি অসুরক্ষিত যৌনসম্পর্কের আগে পিরিয়ড নিয়মিত থাকে এবং সম্পর্কের পরে পিরিয়ড মিস হয়ে যায়, তাহলে এটি প্রেগনেন্সির দিকে ইঙ্গিত করে ৷
- স্তনগুলিতে সংবেদনশীলতা: প্রেগনেন্সির কারণে স্তন পরিবর্তন হয়,যা স্বাভিক ৷ স্তনে ফোলাভাব, ব্যাথা এবং সংবেদনশীলতা একটি লক্ষণ ৷
- ক্লান্তি এবং দূর্বলতা: প্রেগনেন্সির সময় প্রোজেস্টের নামে হরমোনের স্তর শরীরে বেড়ে যায় ৷ এর ফলে মহিলাকে ক্লান্তি এবং দূর্বলতার সম্মুখীন হতে হয় ৷
- বমি-বমি ভাব ও বমি আসা: প্রেগনেন্সির সময় শরীরে অনেক হরমোনের পরিবর্তন হয় ৷ যার ফলে মহিলার সারাদিন বমি ভাব ও বমির সমস্যা হতে পারে ৷
- ক্ষুধার পরিবর্তন: প্রেগনেন্সির সময় ক্ষুধায় অনেক উঠানামা হয় ৷ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পরে বেশি বা কম ক্ষুধা লাগা প্রেগনেন্সির একটি প্রাথমিক লক্ষণ ৷
- প্রেগনেন্সির প্রাথমিক দিনগুলোতে মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা নাক, বন্ধ থাকা, পেট ফোলা , ত্বকের পরির্বতন ৷ এগুলির বেশিরভাগ লক্ষণ প্রেগনেন্সির পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে ৷ তাই লক্ষণ দেখা দিলে প্রেগনেন্সির টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা করুন বা গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলুন ৷
১ সাপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
গর্ভে আপনার ছোট্টমণির জীবন শুরু হতে আর কিছু দিন বাকি তবে এর মধ্যেই আপনার শরীর সব ধরনের প্রস্ততি শুরু করে দিচ্ছে ৷ আগামী ৩ সাপ্তাহ ধরে আপনার শরীর গর্ভধারণের জন্য চুড়ান্ত প্রস্ততি নিবে ৷ এই সময়ে আপনার পেটের ভেতরে ডিম্বানু বের হয়ে সঙ্গীর শুক্রাণুর সাথে মিলিত হবে ৷ সেখান থেকে আপনাদের সোনামণির ছোট্ট ভ্রূণ তৈরি হবে ৷ আর আপনার জরায়ু ছোট্ট মণির বাসা বানানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলবে ৷ অবশেষে শিশুর ভ্রূন আপনার জরায়ুতে নিজের জন্য জায়গা করে নিবে ৷ সেখানেই ছোট্ট মণি ৯ মাস ধরে একটু একটু করে বড় হবে ৷
১ সাপ্তাহে মায়ের শরীর
এক সাপ্তাহে গর্ভধারণেরর আগে আপনার শেষবারের মতো মাসিক হবে ৷ আপনি এখনো গর্ভধারন করেননি,কয়েকটা সাপ্তাহ বাকি আছে ৷ তবে কাগজে-কলমে কিন্ত আপনি এ সাপ্তাহ থেকেই গর্ভধারণের যাত্রা শুরু করছেন !
শুনতে আশ্চর্য লাগছে ? ডাক্তারি হিসেবে গর্ভধারণের আগে আপনার সর্বশেষ মাসিকটা যেদিন শুরু হয়েছে,সেই দিনটাকেই আপনার সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থার প্রথম দিন হিসেবে ধরা হয় ৷ তার মানে ছোট্টমণির জন্মের ৯ মাস বা ৪০ সাপ্তাহ অপেক্ষা করার পালা এখান থেকেই শুরু হচ্ছে ৷ আপনাকে স্বাগতম !
গর্ভধারনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি
আগামী ৩ সাপ্তাহ আপনার শরীর গর্ভধারণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিবে ৷ এসময়ে আপনার শরীরে ডীম্বাণু বের হয়ে সঙ্গীর শুক্রাণুর সাথে মিলে যাবে ৷ তারা মিলেমিশে আপনার সোনামণির ছোট্ট ভ্রূণ তৈরি করবে ৷ তার পর ভ্রূনটা আপনার জরায়ুতে নিজের জায়গা করে নিবে ৷ সেখানেই ৯ মাস ধরে বড় হয়ে আপনার সোনামণি পৃথিবীতে আসবে ৷
আয়রন-ফলিক ট্যাবলেট খান:
শিশুর মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রথিদিন আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া প্রয়োজন ৷ গর্ভধারনের আগে থেকেই নিয়মিত আয়ান-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া উচিত ৷ এ ব্যাপারে যদি আগে থেকে না জেনে থাকেন, তাহলে দেরি না করে এসাপ্তাহ থেকেই আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে দিন ৷
এ সাপ্তাহে বাবার করণীয়
আপনি হয়তো জানেন না যে আপনি কিছু দিনের মধ্যে বাবা হতে চলেছেন ৷ তাই গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এমন সাপ্তাহগুলোতে যা করণীয়,সেই বিষয়গুলো আমরা এখানে তুলে ধরছি ৷
থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং পরীক্ষা করান
আপনি হয়তো থ্যালাসেমিয়া রোগের নাম শুনেছেন ৷ এই রোগে আক্রান্ত হলে মারাত্মক রক্তশূণ্যতা হতে পারে ৷ রোগটা বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তানের কাছে যেতে যেতে পারে ৷ আপনারা আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ হলেও নীরবে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হতে পারেন । ফলে বংশপরম্পরপয় আপনাদের শিশু এই গুরুতর আক্রান্ত হতে পারে ।
যেহেতু বাবা-মা দুজনের কাছ থেকেই রোগটা আসে,তাই শিশুর মায়ের পাশাপাশি আপনারও থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ । বিশেষ করে আপনাদের পরিবারের কারও থ্যালাসেমিয়া বা রক্তশুণ্যতা ইতিহাস থাকলে এটা বিষে ভাবে জরুরি । তাই আত্মীয়দের মধ্যে কারো থ্যালাসেমিয়া আছে কি না খোজঁ নিন ।
অ্যালোথ্যাতিক,হারবাল ও কবিরাজি ওষুধের কথা ডাক্তারকে জানান
আপনার সঙ্গী যদি নিয়মিত কোন ওষুধ সেবন করেন, তাহল চেকআপের সময়ে সেটা অবশ্যই ডাক্তারকে জানাবেন । নিয়মিত খাওয়ার ওষুধ,ভিটামিন এমনকি হারবাল বা কবিরাজি ওষুধ খেলে সেটা ডাক্তারকে খোলাখুলি ভাবে জানানো জরুরি । কেন না অনেক ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবনের জন্য নিরাপদ নয় ।এমন কিছু ওষুধ আছে,যেগুলো খাওয়া চলা চলাকালে গর্ভধারণ করলে গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে । ডাক্তারকে জানালে তিনি গর্ভের শিশু ও শিশুর মায়ের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ অপশনটা জানাতে পারেন । তাই আপনার সঙ্গি যে কোন ধরণের ওষুধ এমনকি ভিটামিন ও হারবাল ওষুধ খেলে সেটা নিয়ে ডাক্তারের সাথে খোলাখুলি কথা বলে পরবর্তিতে করণীয় ঠিক করবেন ।
ধুমপান ছেড়ে দিন
গর্ভবতী মা ধুমপানের আশেপাশে থাকলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে । শিশু প্রিম্যাচিউর হওয়া বা সময়ের আগে প্রসব হওয়া,ওজন কম হওয়া,জন্মগত ত্রুটি হওয়াসহ নানান জটিলতার সম্ভবনা বাড়ে । তাই আপনি ধুম পান করলে সেটা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন ।
আরও পড়ুন
গর্ভবস্থার মাসিক লক্ষণ
প্রেগনেন্সির বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়, যা জানা অতি জরুরি ।
আসুন প্রথিটি মাসের লক্ষণগুলি জানি ।
- প্রথম মাস: স্তনে ফোলা ভাব ও ব্যথার সঙ্গে ক্লান্তি,অসুস্থতা ও বমি প্রেগনেন্সির প্রথম মাসের লক্ষণ ।
- দ্বিতীয় মাস: পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস এবং মুড সুইং প্রেগনেন্সির দ্বিতীয় মাসের লক্ষণ ।
- তৃতীয় মাস: ওজন বৃদ্ধি এবং পেটের বৃদ্ধি তৃতীয় মাসের লক্ষণ । এই সময় শারীরিক পরিবর্তনগুলি ঘটে।
- চতুর্থ মাস: পেটে শিশুর নড়াচড়া অনুভব হওয়া এবং মুখের উজ্জ্বলতা গর্ভাবস্থায় চতুর্থ মাসের লক্ষণ ।
- পঞ্চম মাস: এই সময় শিশুর নাড়াচড়া আরো স্পষ্ট হবে। এবং মহিলা আরো বেশি ক্লন্তি অনুভব করবেন।
- ষষ্ঠ মাস: প্রেগনেন্সির কারনে শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে কিডনিতে ব্যথা হয় । এব অতিরিক্ত অনিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসও প্রেগনেন্সির ষষ্ঠ লক্ষণ গুলির মধ্যে একটি ।
- সপ্তম মাস: এই সময়ে শরীর আপনাকে বাস্তব লেবারের জন্য প্রস্তুত করে । এবং অতিরিক্ত শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন হাত,পা, এবং মুখ ফুলে যায় ।
- অষ্টম মাস: এই সময় শরীরে নাড়াচাড়ার সঙ্গে মহিলার সাস্থ্য আরো খারাপ হয়ে যায় । এই সময় আপনার ডাক্তারের সাঙ্গে আপনার নিয়মিত যোগাযোগ থাকা উচিত ।
- নবম মাস: এই সময় নিয়মিত লেবার পেন হয়,যাতে কমর ও পেটে ব্যথা হয় । এর সঙ্গে মহিলার নালি থেকে পড়া শাশুর জন্মের সময় হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয় ।
যে সব বিষয়ে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে
- যেহেতু প্রত্যেক নারীর গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা ভিন্ন,সেহেতু নিচের উপসর্গাগুলো দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা প্রধানকারীদের সাথে কথা বলতে হবে ।
- মারাত্মক খিল ধরা
- দূর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব
- প্রস্রাবের যন্ত্রণা
- যোনির পথে রক্ত বের হওয়া
- মারাত্মক বমি বমি ভাব
উপসংহার
বেশিরভাব ক্ষেত্রে গর্ভধারনের কয়েকদিন পর মহিলারা নিজের মধ্যে প্রেগনেন্সির লক্ষণ গুলি দেখতে পারে । কিন্ত কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এই লক্ষণ গুলি দেরিতে দেখা যায় । গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ লক্ষণ পিরিয়ডের সময় বা তার ১-২ সাপ্তাহ আগে বা পরে দেখা যায় । যদি একজন মহিলা গর্ভধারণ করার চেষ্টা করছেন এবং নিজে উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখতে পান-তবে তাকে গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে পরাপমর্শ করা উচিত ।

.webp)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ